Skip to main content

মেঘ-মেদুর বরষায়-দীপালি নাগ


গ্রার জীবনকৃষ্ণ তালুকদারের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার কুমারভোগ অঞ্চলের কাজির পাগলা গ্রামে।তিনি ছিলেন আগ্রার সেন্ট জন্স কলেজের ইতিহাসের নামী অধ্যাপক। শুধু আগ্রা নয়, সারা উত্তর ভারত জুড়ে তাঁর খ্যাতি পণ্ডিত  শিল্পরসিক মানুষ হিসাবে। কিন্তু নিজে গায়ক নন।গানটা বোঝেন ভালো ভালোবাসেন। বাড়িতে ঘন ঘন গানের মজলিস বসাতেন।ভারত বিখ্যাত ওস্তাদ শিল্পীরা আসতেন সেইসব মজলিসে। তবে  নিজে যে একেবারে গান জানতেন না তা নয়।  মাঝে মধ্যে একটু আধটু গাইতেন অতুলপ্রাসাদের গান আর সুযোগ পেলে তাইই শেখাতেন মেয়েকে । নিজের পুঁজি ফুরোলে ডাক পড়তো সীতারাম মাস্টারকে।মানে পণ্ডিত সীতারামজিকে ।  তিনি ছিলেন মেয়ে ডালির  জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরু। যখন সীতারামজি গান শেখাতে শুরু করেন তখন ডালি  আট বছরে। নিষ্ঠা ভরে  তান অভ্যেস করে  গুণে গুণে।


     কিন্তু হঠাৎ এই গান নিয়েই হলো একদিন  বিপর্যয়। সন্ধ্যায়  ফাংশন। মঞ্চে উঠে ডালি গাইলো ভুপালীর খেয়াল। শ্রোতারা শুনে দারুন খুশি। বাহ্‌বা দিলো খুব ।  এইটুকু মেয়ে কি সুন্দর ঠিক ঠিক তাল মিলিয়ে  সব গাইলো ! সবাই বলতে লাগলো ,জীবনকৃষ্ণ বাবুর সত্যি বাহাদুরি আছে। কি চৌখুস তৈরী করেছেন মেয়েটাকে !এদিকে  অনুষ্ঠান সেরে  ফিরেছে সবাই বাড়িতে।  কিন্তু বাবাকে দেখে ডালির যেন অস্বস্তি যায়না। বাবা তো কোনও প্রশংসা  করলেন না তার ! কিছু নিশ্চই একটা হয়েছে। সেই স্নেহ মাখা মুখ যেন আজ নেই। ভয় যেন তার যাচ্ছে না ।

 হঠাৎ জীবনকৃষ্ণ ডাকলেন -
‘ডালি, এদিকে এস।
তোমার কি গান গাইতে আর ইচ্ছে করছে না ! 
যেটা করবে নিষ্ঠা নিয়ে করবে। ইচ্ছে না হলে করবে না।‘
ডালি শুনে তো অবাক ! একি কথা শুনছি বাবার মুখে !
ডালি চুপ । মুখে কোন ভাষা নেই।
বাবা বললেন  ‘ ভুপালীতে কটা তান শিখেছিলে তুমি ? ‘কোনও উত্তর নেই।
জীবনকৃষ্ণ নিজেই বলেন , ন টা।
'কটা করলে আজ ?' ডালি তখনোও চূপ।
নিজেই উত্তর দিলেন - আট টা, যাও এখুনি অভ্যেস কর । কাল সকালে আমি পুরো নির্ভুল চাই।
মা শুনে বললেন ‘ আহা , কেন ওকে এখন কষ্ট দিচ্ছো বলতো ! কাল সকালে করবে ও।
বাবা বললেন ‘ তাতে কি  হোল ! আগ্রায় তখন প্রচণ্ড শীত । তবুও ধীরে ধীরে  তানপুরাটা নামাল সে । মনটা কেমন একটা অভিমানে ভরে আছে। তবু সে শুতে যাবেনা। বাড়িতে চোদ্দ খানা ঘর। সবাইকে এড়িয়ে তার সেই নিজের কোণের  ঘরটায় চলে গেল গান সাধতে, একপ্রকার জেদেই ।
    এই ছিল দীপালি  নাগের ছোটবেলা। তাঁর সঙ্গীত জীবনের সাফল্য, প্রতিভার আড়ালে ছিলেন  তাঁর  পিতা ।একটু একটু করে গড়ে  তুলেছিলেন মেয়েকে। মা তরুলতা দেবী ও ছিলেন  সঙ্গীত রসিকা। মায়ের গলা ছিল খুব মিস্টি। মায়ের কাছেও পাঁচ বছর বয়স থেকে  গান শিখেছে সে। তবে মা থাকতেন সারাক্ষনের জন্য অসুস্থ। হাঁটুর ক্ষয়রোগে ভুগেছেন সারাজীবন। আগ্রায় থাকলেও  মায়ের চিকিৎসার জন্য তাই প্রায়ই আসতে  হত কলকাতায়। এখানে এসে উঠতেন  মামার বাড়ি আর ভবানীপুরের  ৩২/এ সাঁকারিপাড়া রোডের  জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতে । মাঝে মাঝে  ছূটি কাটাতে চলে আসতেন সপরিবারে  কলকাতায় একবার মায়ের চিকিৎসার জন্য একবছরের মতো থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। কিন্তু তাইজন্যে মেয়ের  গানের চর্চা তো বন্ধ থাকতে পারেনা !  কলকাতায় তখন ভবানীপুর ছিল গান বাজনার বড় পীঠস্থান  আর বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষালয় ছিল 'সঙ্গীত সম্মিলনী' । প্রতিষ্ঠাতা গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রচারে ও প্রসারে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। আগ্রা থেকে আসা ছোট্ট মেয়েটি হঠাৎই একসময় নজরে পড়ে গেল গিরিজাশঙ্করের। এমনকি তিনি ডেকে আনলেন নিজের শিক্ষায়াতনে। একবছর মন দিয়ে তাঁর কাছে খেয়াল, ঠুংরী ,ভজন যা পেল শিখে নিল সে। তারপর একসময় বাস উঠলো কলকাতার। সপরিবারে জীবনকৃষ্ণ ফিরে গেলেন আগ্রায়।
কাটলো কিছুদিন।মেয়ে বেনারস ইউনিভার্সিটি  থেকে গান আর ছবি আঁকাতে ডিস্টিংশন নিয়ে পাশ করল । এবার তৈরী হল অন্য সমস্যা। কি করবে সে ? গান, না ছবি !  শেষমেস গানই প্রাধান্য পেল তার জীবনে।
ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেব
    গানের জন্য এবার এলেন আগ্রা ঘরানার তসুদ্দক হোসেন খাঁ। বরোদার রাজসভার গায়ক তিনি।তারপর বসির খাঁ। আর সবার উপরে ছিলেন তখনকার যুগের সঙ্গীতের আকাশে সূর্যসম ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ। অকৃপণ হাতে এঁরা সবাই মিলে বিলিয়ে দিয়েছিলেন  ডালিকে  কিভাবে সঙ্গীতের অন্ত:পুরে প্রবেশ করতে হয়।
      তারপর ১৯৩৭ সালের একটি দিনে  গুরুজী  স্বয়ং ফৈয়াজ খাঁ দিল্লীর রেডিও স্টেশনে ঢুকলেন তাকে নিয়ে। সোজা  ডাইরেক্টর জেনারেলের ঘরে গিয়ে বললেন ‘ আমার ছাত্রী ,  একে গাইতে দিতে হবে। আফতাব-ই-মৌসিকী ফৈয়াজ খাঁ নিজে এসে বলছেন !  অডিশনের  যেন প্রশ্নই নেই। একদিন মায়ের পছন্দের গোলাপি বেনারসীটা পরে ডালি গেল দিল্লীর রেডিও  স্টেশনে গান গাইতে। প্রথম প্রোগ্রাম। পঁচিশ মিনিট ধরে দুটি রাগ গেয়েছিল সেদিন। জয়জয়ন্তী আর নট-বেহাগ।।‘পাইয়া পরুঙ্গী পলকা .. আর ‘ ক্যায়সে ক্যায়সে বোল...

আকাশবাণীতে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাক্ষাতকার  নিচ্ছেন শিল্পী
এরপর  এলো অনেক পরিবর্তন। কিশোরীবেলা  পেরিয়ে এসেছে ডালি ।একদিন  দিলীপকুমারে রায়ের বাড়ির এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে গান গাইছেন । উপস্থিত আছেন তৎকালীন এইচ. এম. ভি. র  অধিকর্তা হেমচন্দ্র সোম। তিনি তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে  পরের দিনই ডাক পাঠালেন গ্রামোফোন কোম্পানির নলিনী সরকার স্ট্রীটের অফিসে। শুধু যেতে বলা নয়। বলেছিলেন  গান রেকর্ড হবে।
কবি নজরুল ইসলাম

স্টুডিওতে এসে ডালি তো অবাক, বিস্মিত ! রেকর্ডিং রুমে  আছেন কাজী সাহেব , কমল দাশগুপ্ত ।আরও এসেছেন দু’ চারজন সকলে চেনা নয়। সবাই বললেন -'কই একটা  বাংলা গান গাও  ,  কেমন গাও তুমি  শুনি ।'   মহাবিপদ !  আগ্রার মানুষবাংলা গান কোথায় পাবে ?  সেই কোন ছোটবেলায় মায়ের কাছে শুনেছিলেন 'কেলে ছোঁড়া নষ্টের গোড়া  , বাঁশি কেড়ে নে.....।' । আর বাবার কাছে দু একটা  অতুলপ্রসাদের গান। কিন্তু এ গান তো আর কেউ গায়না !  কি হবে  !  হঠাৎ মনে এলো শচীনদেব বর্মণের  কথা। গিরিজাশঙ্করের  কাছে শেখার আগে কলকাতায় তাঁর কাছে বেশ কিছুদিন গান  শিখেছিলেন ডালি ।   মনে এল  'বল বঁধু কে আজ এলো দ্বারে— '  এই গান  শচীন দেববর্ম শিখিয়েছিলেন  স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সেই গানটাই  গাইলেন ডালি সবার কানে  যেন গানটা  কেটে কেটে বসে গেল । গান শুনে কাজী সাহেব বললেন “ হবে”সেই হোল শুরু। সেদিন কাজীসাহেব   লিখে দিলেন দুটো গান “মেঘ-মেদুর বরষায় কোথা তুমি ... আর ' রুম ঝুম ঝুম নূপুবোলে  (N 17193)
পরের দিন গাইলেন  সেই গান  ’জয়জয়ন্তীর 'পাইয়া পরুঙ্গী পলকা, মোরে মন্দর অব লো... এবং নট-বেহাগ রাগে ‘ক্যায়সে ক্যায়সে বোল, ঝন ঝন ঝন ঝন পায়েল ... গানের সুরে ।  
দীপালি  নাগের প্রথম রেকর্ড

    গান রেকর্ড হয়ে বেরোল ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শারদীয় পুজার গানে। সঙ্গীতরসিক বাঙালীর মন জয় করে নিল সেই গান।  বাংলার সঙ্গীতমহল  চিনলো এক নতুন প্রতিভাকে, নতুন কণ্ঠ আর এক নতুন মেয়েকে।সে তখন আর ছোট্ট ডালি নয়। কুমারি দীপালি তালুকদার।

 এইচ. এম. ভি. তাদের প্রচার পুস্তিকায় লিখলেনঃ-  
‘ এ মাসে এক নবাগতা শিল্পীর সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই। কুমারী দীপালি তালুকদার।ইনি ভারতবিখ্যাত ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের বিশিষ্টা ছাত্রী । ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের  ভ্রাতা ওস্তাদ তসুদ্দক হোসেন খাঁ সাহেবের কাছেও ইনি  দীর্ঘকাল শিখেছেন। কিছুদিন পূর্বে বেতারের গানের বৈঠকে হিন্দুস্থানী খেয়াল গান করে কুমারী দীপালি গুণী ও রসিক সমাজকে মুগ্ধ ও বিষ্মিত করেছিলেন।সম্প্রতি তিনি আমাদের রেকর্ডের আসরে যোগ দিয়েছেন।বাংলা গান হিন্দুস্থানী চালে গাইলে ও কত মধুর ও প্রাণস্পর্শী হয় , কুমারী দীপালির এই গান দুটি তার প্রমান।'

      এরপর এইচ. এম. ভি.  থেকে গেয়েছেন একাধিক রাগপ্রধান ও  কাজী নজরুলের গানের রেকর্ড করেন..  হিন্দুস্থান রেকর্ড থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে ' সোহাগে মৃণাল ভুজে .. এবং ' জাগে জাগে আঁখি পল্লব ..(H 1867) 


দীপালি নাগের  ৭৮ আর.পি.এম রেকর্ড তালিকা(অসম্পুর্ণ) :- 
সংকলন সহায়তায় – শ্রী অশোক চক্রবর্তী ও 
শ্রী অমল বন্দ্যোপাধ্যায়(হিন্দুস্থান রেকর্ড)

N 17193 ( ১৯৩৮, সেপ্টেম্বর ) মেঘ-মেদুর বরষায় (জয়জয়ন্তী) /রুম ঝুম ঝুম নূপূবাজে (নট-বেহাগ)

N 17261 (১৯৩৯ , মার্চ )  নিরজনে ফুলবনে এসো(গারা)/ধীরে ধীরে আসি সে ( দেশী টোড়ী-ত্রিতাল)  : কথা ও সুর - কাজী নজরুল ইসলাম

N 17346 (১৯৩৯, সেপ্টেম্বর )  আজো বোলে কোয়েলিয়া (সিন্দুরা)/রিণিকি ঝিনি রিণিঝিনি ( ছায়ানট): কথা ও সুর - কাজী নজরুল ইসলাম

N 17435 (১৯৪০, মার্চ দূর বেনু কুঞ্জে মুরলী মুহুমুহু(আনন্দী)/এ কি এ মধু শ্যামবিরহে (বৃন্দাবনী সারং): কথা ও সুর - কাজী নজরুল ইসলাম)

N 27004 (১৯৪০, সেপ্টেম্বর)  আসিয়া কাছে  গেলে ফিরে/ ঘন দেয়া গরজায় (রাগপ্রধান): কথা ও সুর - কাজী নজরুল ইসলাম

N 27073 (১৯৪১, জানুয়ারী  ) ফিরে নাহি এলে প্রিয় (গৌড় মল্লার)/আঁখি পাতা ঘুমে জড়ায়ে আসে (কাফি-কানাড়া ) : কথা ও সুর - কাজী নজরুল ইসলাম

N 27193 (১৯৪১, অক্টোবর )  পিউ পিউ পিউ বোলে পাপিয়া(বাহার-ত্রিতাল)/ কেন গো যোগিনী (যোগিয়া) : কথা ও সুর - কাজী নজরুল ইসলাম

N 82628 (১৯৫৪ )  মধু বসন্তে আজি: কথা- অরূপ ভট্টাচার্য, সুর-দূর্গা সেন/ উতলা পবনে: কথা হিমেন নস্কর, সুর- দূর্গা সেন 

H 1867 (১৯৬০, অক্টোবর ) সোহাগে মৃনাল ভুজে/ জাগে জাগে আঁখি পল্লব: কথা- প্রচলিত, সুর-সজনীকান্ত মতিলাল

H 1973 (১৯৬১ ,অক্টোবর ) আমায় বোলনা ভুলিতে/নয়নে কাজল কথা- হিমেন নস্কর , সুর-সজনীকান্ত মতিলাল

H 2079  (১৯৬২, এপ্রিল ) দূর গাঁও সে/ মেরে মিলন কে লিয়ে  :  কথা- রাধেশ্যাম পুরোহিত, সুর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

H 2118 (১৯৬২, অক্টোবর  ) রিমিঝিমি রিমি ঝিমি/ কেন ঘুম আসেনা :  কথা- হিমেন নস্কর , সুর-গোপাল দাশগুপ্ত

H 2158 (১৯৬৩  ) তারায় তারায় মেঘ বরষায় / তারা দীপ জ্বালিল এক দীপের মালা  :  কথা- হিমেন নস্কর , সুর-দীপালি নাগ

N 17198  চুঁরিয়া বারবার ক্যর্(খেয়াল)‌/ জান সুজান অজান ( খেয়াল)
N 27215  ‌য়হি গণিমত জানা/ ছৌম ছননন বিছুয়া বাজে(উচ্চাঙ্গসঙ্গীত)
N 27426  বনবারী মোরী(কেদারা)/পল না লাগি(গৌড় সারঙ্গ)
N 27458  এ মগ জৈয়ত(রামশখ-রূপক)/লাগো হি আবে(গৌরি-ত্রিতাল)

     গুঞ্জমালা কেন অঞ্চলে শুকায় ( টেস্ট রেকর্ড) : কথা ও সুর - কাজী নজরুল ইসলাম
হিন্দীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত
তিনি ইহলোকের মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন ২০০৯ সালের ২০শে ডিসেম্বর। কিন্তু তাঁর কণ্ঠের গানের সুরের ললিত গতি, মধুর ছন্দ ও কারুকার্য আজও সঙ্গিতপিয়াসী বাঙালিকে মনোহরণ করে রেখেছে। 

Comments

  1. Anek kichhu jante parlam. Record ponji tao khub valo songjojon. .

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মরমিয়া বাঁশি- অখিলবন্ধু ঘোষ (২০.১০.১৯২০-২০-০৩-১৯৮৮)

" বা ড়িটা আমার অনেক দিনের চেনা । প্রায় তিরিশ বছর । নোনা ধরা পুরোনো বাড়ি । তিরিশ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে । বদলায়নি বাড়িটার চেহারা । এই জীর্ণ প্রাসাদে প্রায়ই সুর ভেসে ওঠে । ঠিক তখন মনে হয় বাড়িটা যে ধ্বসে পড়েনি , তার কারণ মনে হয় সুরের গাঁথুনি । যিনি সুরসাধক তাঁর কাঁচা চুল পাকা হয়েছে , দাঁত অন্তর্হিত — কিন্তু সুর অনড় । গান ধরলেই বিবর্ণ দেওয়ালে রামধনুর রঙ । হলুদ পাতায় সবুজ শিরা ।"    ১৯৮৫ সালে    ‘ সুকন্যা ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন মানব গুপ্ত ছদ্মনামে  তাঁর এক ছাত্র।                                  সাধকের নাম অখিলবন্ধু ঘোষ । নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে যেন হৃদয়াকাশে   ভিড় করে আসে এমন সব গান , যে গান শুনতে চেয়ে ছে মন   বার বার   - ‘ তোমার ভুবনে ফুলের মে লা’ ,  ‘ কেন তুমি বদলে গেছ’ , ‘ এমনি দিনে মা যে আমার হারিয়ে গেছে ‘। যেন কোনো এক উদাসীন বাউল গেয়ে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে যা র সঞ্চরণ   এখনোও কান পাতলে শোনা যায় । তাঁর গানের সহজ সরল ...

প্রভু তোমারি রূপের মাধুরী 💮 গীতশ্রী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়

আ লিপুর , গড়িয়াহাট বা শ্যামবাজারের কোন সম্ভ্রান্ত বাড়িতে সমবেত হয়েছেন শিক্ষিত ভদ্র মানুষেরা।ঘরে পট , প্রতিকৃতি দেবতার আর দেবতুল্য মানুষদের। ধুপদানিতে ধুপ জ্বলছে , টানা ফরাস পড়েছে ঘর জুড়ে। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও এসেছে  অনেকে। উত্‍কণ্ঠা সবার , আসবেন তিনি। গাইবেন গান , পদাবলী কীর্তন। তিনি এলেন। পরনে সাদা সরু পাড় ধুতি , গায়ে সাদা চাদর , চোখে চশমা। সর্বাঙ্গে না কোনো প্রসাধন না কোনো অলঙ্কারের চিহ্ন। মাথা নীচু আর শান্ত পায়ে ঢুকলেন। তারপর টেনে নিলেন হারমোনিয়ামটা।  সঙ্গে গুরুভগ্নী , ছাত্রীরা। তারাও প্রস্তুত ছিলোনা মোটে । না , আজ কোনও পদাবলী কীর্তন নয়। আজ শুধু নামগান। যদিও আজ সোমবার , মৌন থাকার দিন। কিন্তু ঈশ্বরের নাম তো সবদিনই নেওয়া যায়! তাই বাধা নেই।                                                       মধুর উদাত্ত স্বর।ঋজু ভঙ্গিতে বসে রইলেন একই ভাবে !চোখের পাতা একবারও খুললেন না। শান্ত ভাবে গেয়ে চলেছেন 'হরে কৃষ্ণ, হ...