দত্ত
পরিবার হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরের প্রাচীন বাসিন্দা। পিতা মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিহার
ও উড়িষ্যা প্রদেশের Executive Engineer । কিন্তু সংস্কৃতি ও সঙ্গীত চর্চায় তাঁর খামতি
ছিলোনা। তিনি যে সঙ্গীতরসিক প্রমাণ
পাওয়া যায় তাঁর রচিত 'আত্ম কাহিনী ' , ' উন্মীলন সঙ্গীত “ এবং 'সমাজ চিত্র' প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে। পুত্র
হরেন্দ্রর গানের গলা আছে দেখে মহেন্দ্রনাথ তাঁর জন্য সঙ্গীত শিক্ষার ব্যাবস্থা করেন খুব
ছোট থেকেই। সেই
সময়ে রাঁচীর মোরাবাদী পাহাড়ের কাছে মহেন্দ্রবাবু দুটি বাড়ি করেন। আর যার অদুরেই
ছিলো জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শান্তিধাম' নিবাস
। তাই দত্ত পরিবারের সাথে শান্তিধামের যোগাযোগ ও ঘনিষ্টতা তৈরী হয়েছিলো প্রথম থেকেই । ইন্দিরা
দেবী চৌধুরাণী প্রমুখ অনেকেই রাঁচীতে যেতেন যার ফলে হরেন্দ্র খুব অল্প বয়স থেকে ব্রহ্মসঙ্গীত এং রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার ও শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন । এমনকি
রাঁচীতে অনুষ্ঠিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি
নাটকেও তিনি অংশ নেন।
১৯১৫
সালে হরেন্দ্রনাথ চিতপুরস্থ ওরিয়েন্টাল সেমিনারী স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায়
প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন । ১৯১৭ সালে কলকাতায় এনি বেসান্তের সভানেত্রীত্বে কংগ্রেস বসে। হরেন্দ্রনাথ এবং
তাঁর কলেজের দুই
বন্ধু পাঁচকড়ি সরকার এবং শৈলকুমার
মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে টিকিট কেটে
ওয়েলিংটন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত এই কংগ্রেসে যোগদান করেন। এই সভায় অমলা দাশের খালি
গলায় 'বন্দে মাতরম' গান শুনে হরেন্দ্রনাথ আরো উজ্জ্বীবিত
হন।
১৯২০ সালে
কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসে। এই সভায় সম্মিলিত যে গান পরিবেশিত হয়
ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী ছিলেন তার পরিচালনার দায়িত্বে। হরেন্দ্রনাথও ছিলেন এই গানের দলে। এইসব
সাঙ্গীতিক অধিবেশন গুলোতে হাজির হতেন কাজী নজরুল থেকে শুরু করে দিলীপকুমার রায়ের
মতো কণ্ঠশিল্পী এবং সুরকারেরা। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন দিকে দিকে ছড়িয়ে
পড়ে। অসহযোগ আন্দোলনের পটভুমি হরেন্দ্রনাথকে গভীরভাবে স্পর্শ করে এবং গান্ধীজীর আদর্শে
অনুপ্রাণীত হয়ে খদ্দর পরা পর্যন্ত শুরু করেন । এমনকি
নিজের হাতে চরকাও কাটেন। দেশপ্রেমের ভক্তি তখন তাঁর শিরায় শিরায় বয়ে যাচ্ছে । এরপর ১৯২২ সালে গ্রামোফোন
কোম্পানী তাঁর গান রেকর্ড করার জন্য আমন্ত্রন জানান । ওই বছরের শারদীয় পুজোর গানে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম
রেকর্ডের গান ' বন্দেমাতরম্' – ' এবং উল্টো পিঠে কবিগুরুর “দেশ দেশ নন্দিত করি –(P 5182)
আর সেদিন শারদীয় পূজোর গানের প্রচার পুস্তিকাতে মুদ্রিত হোল " কি শুভ ক্ষণে বঙ্কিমবাবু 'বন্দেমাতরম' গানখানি রচনা করিয়াছিলেন। আজ তাহার রচিত এই গান সমগ্র ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়াছে। এইজন্য আমরা বহু যত্নে কলিকাতা ইউনিভারসিটি ইন্সটিটিউটের সহকারী সেক্রেটারী শ্রীযুক্ত হরেন্দ্রনাথ দত্ত( বি. এ.) মহাশয়ের দ্বারা এই গানগুলি রেকর্ড করাইয়া বাহির করিলাম। অপরদিকে কবিন্দ্র রবীন্দ্রনাথের 'দেশ দেশ নন্দিত করি -- এই অমর গানখানি উক্ত হরেন্দ্রবাবু ভক্তির সহিত গাহিয়াছেন । এই রেকর্ডখানি প্রত্যেক ঘরে থাকিয়া লোকের মনে দেশের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা জাগরূপ রাখিবে।"
![]() |
এইচ. এম. ভি. লেভেলে প্রকাশিত প্রথম 'বন্দে মাতরম্' |
আর সেদিন শারদীয় পূজোর গানের প্রচার পুস্তিকাতে মুদ্রিত হোল " কি শুভ ক্ষণে বঙ্কিমবাবু 'বন্দেমাতরম' গানখানি রচনা করিয়াছিলেন। আজ তাহার রচিত এই গান সমগ্র ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়াছে। এইজন্য আমরা বহু যত্নে কলিকাতা ইউনিভারসিটি ইন্সটিটিউটের সহকারী সেক্রেটারী শ্রীযুক্ত হরেন্দ্রনাথ দত্ত( বি. এ.) মহাশয়ের দ্বারা এই গানগুলি রেকর্ড করাইয়া বাহির করিলাম। অপরদিকে কবিন্দ্র রবীন্দ্রনাথের 'দেশ দেশ নন্দিত করি -- এই অমর গানখানি উক্ত হরেন্দ্রবাবু ভক্তির সহিত গাহিয়াছেন । এই রেকর্ডখানি প্রত্যেক ঘরে থাকিয়া লোকের মনে দেশের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা জাগরূপ রাখিবে।"
'হিজ মাস্টার্স
ভয়েস' রেকর্ড লেভেলে এর পুর্বে কোনোও
বন্দেমাতরম্ গান প্রকাশিত হয় নি। এটি এইচ.এম. ভি. থেকে প্রকাশিত
প্রথম “বন্দে মাতরম’। এর পুর্বে কবিকণ্ঠে সিলিণ্ডার, প্যাথে, এবং নারায়ণচন্দ্র মুখার্জীর
কণ্ঠে নিকোল রেকর্ডে প্রকাশিত বন্দেমাতরম্ রেকর্ডগুলি ছিল গ্রামোফোন রেকর্ড লেভেলের
এক একটা দুর্লভ মাধ্যম। তাছাড়া এইসব কোম্পানিগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি ভারতবর্ষে.. কিন্তু হরেনবাবুর রেকর্ড করা এই ‘বন্দে মাতরম্ ’ রেকর্ডটি প্রায় দু'দশকের বেশি সময় ধরে চালু ছিল । তাই এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জনমানসে যে বিশেষ অনুপ্রেরণা
জুগিয়েছিল তার সন্দেহর অবকাশ নেই।
১৯২৫ সাল নজরুল-প্রেমীদের কাছে একটি স্মরণীয় বছর। কেননা এই বছরেই প্রকাশিত হয় নজরুলগীতির প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড “ জাতের নামে বজ্জাতি—(P 6945)। শিল্পী ছিলেন হরেন্দ্রনাথ দত্ত।
'হিজ মাস্টারস্ ভয়েস' থেকে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে শারদীয় পূজোর গান উপলক্ষে প্রকাশিত হয় l উল্টোপিঠে ছিলো রজনীকান্তের 'তাই ভালো মোদের মায়ের ঘরের শুধু ভাত..। হরেন্দ্রনাথ গ্রামোফোন রেকর্ডে গেয়েছেন একাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীত । এছাড়া গেয়েছেন রেকর্ডে অতুলপ্রসাদের গান। তার মধ্যে 'বল বল বল সবে /আ'মরি বাঙলা ভাষা(P 6276), বঁধু এমন বাদরে তুমি কোথা ( P 5600) উল্লেখযোগ্য।
সার্থক জনম আমার/যদি তোর ডাক শুনে কেউ (P 5270)
বাদল মেঘে মাদল বাজে (P 5600)
তুমি যে সুরের আগুন(P 5750)
দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার/সন্ধ্যা হোল গো(P 5895)
শুধু তোমার বাণী নয়/আমার সকল দু:খের প্রদীপ(P 5979)
একটু কেবল বসতে দিও/আজি দখিন দুয়ার খোলা(P 6492)
এই লভিনু সঙ্গ তব/কেন চোখের জলে ভিজিয়ে(6574)
বাদল বাউল বাজায়/আজি বর্ষা রাতের শেষে (P 6760)
আলোকের এই ঝরণা ধারায়/আজি মর্মর ধ্বনি কেন বাজিল(P 6927)
তুমি একলা ঘরে বসে/ভেঙে মোর ঘরের চাবি(7058)
দে লো সখি দে পরায়ে(P 8112)
ও আমার চাঁদের আলো/আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে(P 9043)
ঋণ- HMV রেকর্ড সঙ্গীত
১৯২৫ সাল নজরুল-প্রেমীদের কাছে একটি স্মরণীয় বছর। কেননা এই বছরেই প্রকাশিত হয় নজরুলগীতির প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড “ জাতের নামে বজ্জাতি—(P 6945)। শিল্পী ছিলেন হরেন্দ্রনাথ দত্ত।
![]() |
গ্রামোফোন রেকর্ডে প্রকাশিত প্রথম নজরুল গীতি |
তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানঃ-
সার্থক জনম আমার/যদি তোর ডাক শুনে কেউ (P 5270)
বাদল মেঘে মাদল বাজে (P 5600)
তুমি যে সুরের আগুন(P 5750)
দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার/সন্ধ্যা হোল গো(P 5895)
শুধু তোমার বাণী নয়/আমার সকল দু:খের প্রদীপ(P 5979)
একটু কেবল বসতে দিও/আজি দখিন দুয়ার খোলা(P 6492)
এই লভিনু সঙ্গ তব/কেন চোখের জলে ভিজিয়ে(6574)
বাদল বাউল বাজায়/আজি বর্ষা রাতের শেষে (P 6760)
আলোকের এই ঝরণা ধারায়/আজি মর্মর ধ্বনি কেন বাজিল(P 6927)
তুমি একলা ঘরে বসে/ভেঙে মোর ঘরের চাবি(7058)
দে লো সখি দে পরায়ে(P 8112)
ও আমার চাঁদের আলো/আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে(P 9043)
ঋণ- HMV রেকর্ড সঙ্গীত
Comments
Post a Comment