Skip to main content

চিন্ময় লাহিড়ী (২০.০৩.১৯২০-১৭.০৮.১৯৮৪) : মোর গান যদি লেগে থাকে ভালো


ন্ম ১৯২০ সালের ২০শে মার্চ বাংলাদেশের  পাবনা জেলার তাঁতীবন্ধ  গ্রামে  । পিতা শ্রীজীবচন্দ্র লাহিড়ী ও মাতা শ্রীমতী সরোজবাসিনী দেবী  ।  মাত্র দু বছর বয়সে পিতার  কর্মসূত্রে তাঁর সাথে  চলে আসেন লখনউ । শ্রীজীবচন্দ্র  মনে প্রাণে চাইতেন ছেলে  বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক। প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু কনুর যেন এসব ভালো লাগেনা সারাদিন ঘুরে বেড়ায় আর  সকাল সন্ধ্যায় আখড়ায় ওস্তাদজীর কাছে মার প্যাঁচ শেখে গায়ে ধূলো মেখে কুস্তিগীর হবে সে । মনে  আর  কোনো চিন্তা নেই দিন যাচ্ছে  মহা আনন্দে এদিকে  বাবা রেগে যেন আগুন হচ্ছেন দিন দিন ছেলেটা মনে করছে  কি ! এভাবে কি জীবন কাটাবে সে ! সারাদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল ডানপিঠে ছিলের সাথে,  আর সর্দারি করে বেড়াচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে হবে কিনা শেষ পর্যন্ত কুস্তিগী ! বাবা ছেলেকে নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং   কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করেন । কিন্তু শেষমেস  বিফল হন তিনি  এসব মালমশলা , হিসেবপত্তর, লোক লস্করের কথা  ভাবলে  কনুর মাথা হিম হয়ে যায়  । এর থেকে ঢের ভালো স্কুল পালিয়ে পরের বাগানে ফল চুরি করা , নয়তো বন্ধু রাজু আর নিতুর সাথে গোমতীর ধারে ঘুরে বেড়ানো, বা অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে  যেখানে মন চায়।


   তা চলছিল বেশ। এইভাবে ঘুরে ঘুরে  বেড়ানো সারাক্ষন। কিন্তু কোথা থেকে এক উদাসীন হাওয়া দুলিয়ে দিয়ে গেল মনটা  কি হোল কে জানে ! মনের আক্ষেপে একদিন  বসে থাকে তিন বন্ধু । বাঁধন ছাড়া  মন হঠাৎ   আটকে যায় কোন  অজানার আহ্বানে। 
হাতের ঢিলটা আনমনে ছুঁড়ে দিয়ে কানু  লে -
'আচ্ছা  রাজু , আমরা তো কিছুই করলাম না রে জীবনে , বাড়িতে সবাই বকে,  পাড়ার লোকে কিন্তু আমরা তো পারি ,
বাধা দিল রাজু  
কনু তুই গাইয়ে হ, এমন মিস্টি গলা তোর !'  অনেক ভেবেচিন্তে বলল নিতু
 কথাটা মন্দ লাগেনি কনুর অবশেষে অনেক গবেষণার পর আর দুজনেরও ব্যবস্থা হল তারা হবে কবি আর অভিনেতা সেই দিনই বুড়ো শিবের মন্দির ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলো তিনজন , শিল্পী হওয়ার কিশোর বয়সের সেই প্রতিজ্ঞা যেন এক অদৃশ্য পাকে বেঁধে ফেলল কনুকে কিন্তু এভাবে তো হবেনা গুরু চাই তা গুরুর অভাব কি লখনউ শহরে ? তাই মরিস কলেজে চলে গেল কনু আর্জি পেশ করল শ্রীকৃষ্ণ রতনজন্‌করের কাছে কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই বেঁকে বসলেন তিনি 
বললেন-' তুমি কুস্তি করো নাকি ! এমন ঘাড়ে গর্দানে  চেহারায় গান হয়না।'
কনু জবাব দিল  ঘাড় নিয়ে  আপনি ভাববেন না , ও  আমি ঠিক করে নেব,  আমাকে আপনি শেখান গুরুজী।'
'ঠিক হ্যায়তব্‌ করকে দেখাওসানিনি রেসাসা নি সা-----
ছোট্ট ছোট্ট  টুকরো সাধতে লাগলো কনু সাধতে সাধতে গলা ধরে গেল পরীক্ষা দিতে এলো  সেই ধরা গলা নিয়ে। দেখে শুনে প্রসন্ন  হাসি হেসে   গুরুজী, বললেন -
'নাম কেয়া হ্যায় তুমারা
চিন্ময়চিন্ময় লাহিড়ী 
'ঠিক আছে শেখাব ভর্তি হয়ে যাও কলেজে আর কুস্তি ছাড়ো।'
       কুস্তি পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিল কনু কুস্তি গিয়ে এল গান দিবারাত্র  বিরাম নেই সাধনার। দীর্ঘ একমুখী সাধনার ফলে  মিলল তার ফলও  খুব সহজেই নতুন নতুন অলঙ্কার বিস্তার, তান তুলে নিচ্ছে  কণ্ঠে সে  ! সঙ্গীত শিক্ষকরা তার গানে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন এরই মধ্যে  একদিন গান গাইবার সুযোগ এলো অল ইণ্ডিয়া রেডিও প্রোগ্রামে   রেডিওতে  প্রথম গাইলেন গীত,  গজল । তারপর সেই ১৯৩৬ সাল থেকে   লখনউ বেতারের নিয়মিত শিল্পী হয়ে যান চিন্ময়। 
বেতারে শিল্পী
    গান গেয়ে চিন্ময়ের মনে সাধনার  একাগ্রতা দিন দিন  আরোও বাড়তে থাকে। কিন্তু শুধু সাধলে তো হবেনা শোনাও দরকার লখনউতে গুণীজনের আনাগোনার তো বিরাম নেই। তাঁদের গান শোনার মধ্যে   নতুন নতুন শিক্ষা লাভের বিরাট সুযোগ। সেই সুযোগ কোনদিনও হাতছাড়া করতেন না  তিনি সবসময় মনে করতেন একই ঘরানাকে আঁকড়ে ধরে না থেকে বিভিন্ন সৃষ্টি থেকে তৈরি করতে হবে নতুন নতুন ধারা। এসব ভাবনা সারাক্ষন অস্থির করে তুলত তাঁকে । ফৈয়াজ খাঁ এসেছেন জলসায়। সেখানে যেতে হবে।জানতে হবে আগ্রা ঘরানার গানরতন জনকরজির  সতীর্থ দিলীপচন্দ্র বেদীর সাথেও হোল পরিচয়  তিনি ছিলেন ফৈয়াজ খাঁর শিষ্য। বেদিজীর কাছে সরাসরি  না শিখলেও তাঁর সঙ্গ করে ভারতীয় সঙ্গীতের অনেক কিছুই অর্জন করলেন। এদিকে আবার  বেগম আখতারের বাড়িতে রয়েছেন বহুরে ওহিদ খাঁ।তাঁর  গানও শুনতে হবে। বন্ধু ইলিয়াস বাজান সেতার । সেটাও শোনা দরকার।এভাবে তিল তিল করে মনের চিন্তা বিকশিত করতে থাকলেন তিনি । সেইসব চিন্তা একসময় বাইরের জগতে প্রকাশ পেতে চাইলো। তা সময়  ছিল উপযুক্ত। একদিন সুরেশ চক্রবর্তী ডেকে পাঠালেন তাঁকে ঢাকায় । তখনকার কলকাতা আর  ঢাকা   সঙ্গীত আবহ সম্পর্কে সম্পুর্ন  ওয়াকিবহাল  ছিলেন চিন্ময় সারাক্ষন উন্মুখ  হয়ে থাকতেন  ঢাকা বা কলকাতায় আসার জন্য সুযোগ ও এলো ঢাকা এলেন এবং ঢাকা রেডিওতে চাকরি নিলেন । রেডিওতে বিশেষ সঙ্গীত প্রযোজকের দায়িত্ব নিলেন। এইসময় ঢাকায় আগ্রা ঘরানার শিল্পী ওস্তাদ আহমেদ খানের পুত্র ওস্তাদ গুল মহম্মদ খানের সাথে পরিচয় । জন্মসূত্রে তিনি পাঠান বংশীয় হলেও শুধুমাত্র ঢাকা শহরকে ভালবেসে ১৯৩২ সাল থেকে আমৃত্যু ঢাকাতেই ছিলেন। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ,গান মুগ্ধ করেছিল সেখানকার  সঙ্গীতরসিক কূলকে। এমন একজন ব্যক্তিত্বের সাথে  পরিচয় , চিন্ময়ের সঙ্গীতপিপাসু মনের তৃষ্ণা অনেকটা মিটিয়ে দিয়েছিল।ঢাকা রেডিও ষ্টেশন থেকে নিয়মিত প্রচার হতো তাঁর গান।  ঢাকাতে এসে শিক্ষক এবং সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে চিন্ময় বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।
দিলীপচন্দ্র বেদী
    এরপর ১৯৪৪ সালে ঘটল এক ঐতিহাসিক  ঘটনা। সেসময় এইচ. এম. ভি.  গান রেকর্ড করার জন্য এক মোবাইল ইউনিট তৈরি করেছিল। তাদের কাজ ছিল ঘুরে ঘুরে খুঁজে খুঁজে   উদীয়মান শিল্পীদের গান রেকর্ড  করা। তাই গ্রামোফোন কোম্পানি চিন্ময় লাহিড়ীর মতো শিল্পীর  গান রেকর্ড করার  সুযোগ হাতছাড়া করলেন না।
এইচ.এম. ভি.  থেকে প্রকাশিত শিল্পীর প্রথম রেরর্ড
ঢাকায় পৌঁছে তাঁর কণ্ঠের দুটি গান রেকর্ড করলেন গোপাল দাশগুপ্তর কথায় আর   চিন্ময় লাহিড়ীর সুরে । গান দুটি ছিল ‘ না মানেনা মানা(আড়ানা).... আর উল্টোপিঠে ছিল ‘ দুয়ারে এলো কে..(মধ্যমাবতী)(N 27651) ।  প্রথম রেকর্ড   প্রকাশিত হবার পর তাঁর জনপ্রিয়তা আরোও বেড়ে যায়। নানা জায়গা থেকে বহু সঙ্গীতপিয়াসী তাঁর কাছে তালিম নেবার জন্য আসতে শুরু করেন। নিজেও গানের  পরম  আনন্দে  ভেসে যেতে থাকেনকিন্তু সে আনন্দ বেশীদিন আর স্থায়ী হল না দাঙ্গা হাঙ্গামায় পূর্ববঙ্গ তখন উত্তাল ঢাকা রেডিওর চাকরির মায়া ছেড়ে কলকাতায় আসতে বাধ্য হলেন  চিন্ময়
      কলকাতা তার পুরো অচেনাজ্ঞানবাবুর ডিকসন্‌ লেনের বাড়ির  খবরটা শুধু জানা ছিল অনেক আকাঙ্খা ছিল ওখানে যাবার।  তবে সত্যি সত্যি কলকাতা তাঁকে বিমুখ করেনি লখনউ প্রবাসী ছেলেটিকে কলকাতার সঙ্গীত সমাজ  আপন করে নিয়েছিল থাকার মতো একটা ভালো আশ্রয় পেয়ে গিয়েছিলেন রাধিকামোহন  মিত্রর কাছে সেই থেকে শুরু হোল কলকাতা বাস

রাধিকামোহন মৈত্র
তারপর যত এক একটি  বছর কেটে গিয়েছে  তত সম্পর্ক  আরোও দৃঢ় হয়েছে নিয়মিত পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, যামিনী গাঙ্গুলীর মত ব্যক্তিত্বের সাথে সঙ্গলাভের  ফলে  কলকাতার সঙ্গীতমহলে প্রতিষ্ঠা পেতে তাঁর বেশি সময় লাগেনি। 

জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ 
এইচ. এম.  ভি. থেকে তাঁর দ্বিতীয় রেকর্ড প্রকাশিত হয়  জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কথা ও সুরে ১৯৪৮ সালে দমদম ষ্টুডিও তে .. তার মধ্যে একটি গান ছিলো "আসি বলে        কেন এলোনা (N 27703) .. এরপর  ১৯৫২ সালে অল  বেঙ্গল   মিউজিক কনফারেন্সে গান গেয়ে রাতারাতি তাঁর  যশ , খ্যাতি সম্মান কলকাতা সহ বাংলার  চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে শিল্পী

         চিন্ময় লাহিড়ীর সঙ্গীত জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট ছিলো নতুন কিছু আহরন এবং  তা থেকে সঙ্গীতের নিজস্ব নতুন ধারা গড়ে তোলা। প্রচলিত প্রথার বাইরে বেরিয়ে এসে নতুনত্বের সন্ধান দিয়েছিলেন তিনি। যার ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছিল নতুন নতুন রাগ। তার মধ্যে শ্যামকোষ , যোগমায়া, প্রভাতীতৌড়ী , রজনী কল্যাণ , গান্ধারিকা, নাগরঞ্জনী, মঙ্গলবতী, শুভ্রা র মতো  রাগগুলি উল্লেখযোগ্য   নতুন একধরনের সরগম তিনি তৈরি করেছিলেন যা একেবারে তাঁর নিজস্ব। এছাড়া 'মগন' ছদ্মনামে ভালো ভালো বন্দিশ রচনা করেন যেগুলি  “ মগনগীত ও তান মঞ্জরী’  গ্রন্থে পাওয়া যায়।

    লখনউ বেতারের সাথে প্রথম বার যুক্ত হবার পরে তিনি আমৃত্যু বিভিন্ন ভাবে  বেতারে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম এবং তারপর ১৯৭৪-৭৫ সাল থেকে রবীন্দ্রভারতীর সাথে আবার অধ্যাপনার কাজে  যুক্ত হন।এছাড়া এইচ.এম. ভি. কোম্পানিতে প্রশিক্ষকের কাজে নিযুক্ত ছিলেন অনেকদিন।  এইচ.এম. ভি. তে ট্রেনার পদে  যুক্ত থাকাকালীন বহু শিল্পী তাঁর কাছে গান শিখেছিলেন এবং তাঁরা পরবর্তী কালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন । এদের মধ্যে ছিলেন  সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ,সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ,শ্যামল মিত্র, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাণী ঘোষাল প্রমুখ। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়কে তিনি নিজের হাতে তৈরী করেছিলেন।
'বৃন্দাবন লীলা' তে .. শিল্পীর প্লেব্যাক 

সেই সময় তাঁর কাছে আরোও যাঁরা  উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেন  তাদের মধ্যে প্রথমে যাঁর নাম  আসে তিনি পরভিন সুলতানা। তিনি প্রথম থেকে চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে তালিম পান।এছাড়া ছিলেন দীননাথ মিশ্র। 
পরভিন সুলতানা, মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায় 

আর একেবারে শুরুতে ছিলেন  মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি এক  স্মৃতিচারণায় লিখছেন ’ শ্রদ্ধেয় চিন্ময় কাকা আমার গুরু ছিলেন, সঙ্গীতের একটা পরীক্ষা দেবার সময় আমার বাবা শৈলেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে তিনি আমাকে তালিম দিতে শুরু করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সালের শেষ দিক পর্যন্ত তাঁর কাছে আমি তালিম নিই।ওঁর কাছে আমি ইমন ও মারোয়া রাগ দুটি শিখি।এছাড়া ধ্রুপদ ধামার, ওঁর লেখা ও সুর দেওয়া কিছু গীত শিখি।  গলার আওয়াজ ছিল পাতলা আর মিস্টি। লয়ের সঙ্গে সমন্বয়  রেখে খুব সুন্দরভাবে গান গাইতেন। মানুষ হিসাবে খুব ভালো ছিলেন।' 
ট্রেনার চিন্ময় লাহিড়ী
     চলচ্চিত্রে তাঁর ভুমিকা ছিল মূলত সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক শিল্পীরূপে। শোনা যায়  রতন চ্যাটার্জীর 'মানদণ্ড'  (১৯৫০) সিনেমায় তিনি প্রথম কণ্ঠদান করেন। কিন্তু তার কোনো প্রামাণ্য  রেকর্ড তথ্য বা সিনেমার বুকলেটে উল্লেখ   পাইনি.. বুকলেটে যে  সমবেত কণ্ঠের  গানটি (আপন কাজে অলস হলে চলবে না :- কথা - সুবোধ পুরকায়স্থ,  সুর - অনিল বাগচী )  আছে তা হিন্দুস্থান রেকর্ড ( H 1470) থেকে প্রকাশিত হয়, যেখানে তাঁর নাম মুদ্রিত নেই.. বাকি গানগুলি মহিলা কণ্ঠে., যেগুলির বেশিরভাগ সন্ধ্যা মুখার্জি গেয়েছেন... এরপর  দ্বৈরথ(১৯৫১) , শাপমোচন(১৯৫৫) , বৃন্দাবন লীলা (১৯৫৮), অন্তরাল (১৯৬৫),


ছায়াছবিতেও  নেপথ্য কণ্ঠ দেন । সুধীর মুখার্জীর  'শাপমোচন'  সিনেমায় তাঁর এবং প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া 'পটদীপ'  রাগের  'ত্রিবেণী তীর্থ পথে কে গাহিল' গানটি ভীষন জনপ্রিয় হয়।এই ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেন ।এছাড়া গুণময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হে মহামানব’ (১৯৫৬) , রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ‘জীবন নিয়ে’  (১৯৭৬)  এবং 'বাপুনে কাঁহা থা’  ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
চিন্ময় লাহিড়ী সুরারোপিত ছায়াছবি
আধুনিক ও রাগপ্রধান গানের ক্ষেত্রে , তাঁর সুরে ১৯৫৪ সালে  ইলা বসু গেয়েছেন  দুটি রাগপ্রধান গান ‘বনে বনে গাহে কোয়েলিয়া / আষাঢ় সন্ধ্যা ছায়া নামে (GE 24723) [কথা-শ্যামল গুপ্ত ], মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় গেয়েছেন পবিত্র মিত্রর কথায়  'কেন ফিরে যাও বেদনায় (কলাবতী) /কত যে সয়েছি ব্যথা (লাবনী) [ N 82934 ;  ১৯৬১ ]  , ১৯৬১ সালে শ্যামল মিত্রর কণ্ঠে ' ফাগুন এলো তুমি এলেনা ( মার্গ বেহাগ)/বলেছি তো কতবার (ঠুংরী, মিশ্র পাহাড়ী)[N 82914], 
ষাটের দশকের মাঝামাঝি ইকোটোন রেকর্ডস থেকে  তাঁর  সুরে আশালতা গাঙ্গুলী গেয়েছেন ‘ এমন দিবস যাবেনা সজনী/মোর গান যদি লেগে থাকে ভাল (ECT –E-2)। এছাড়া মেগাফোন রেকর্ড থেকে তাঁর নিজের সুরে স্বকণ্ঠে দুটি রাগপ্রধান গান প্রকাশ পায় ১৯৭৯ সালে ' রজনী পোহালো যে পথপানে চাহিয়া /রাধা বলে শুধু বাঁশরী বাজে(EJNG 1067) [ কথা- পবিত্র মিত্র] 

    বাড়িতে প্রকৃত সঙ্গীত চর্চা বলতে যা বোঝায় তা কোনোদিনও ছিলনা লাহিড়ী পরিবারে। শুধুমাত্র নিজের পরিশ্রম, ধ্যান,  জ্ঞান আর রেওয়াজের মধ্য দিয়ে  অনেক চড়াই উতরাই পথ পেরিয়ে একদিন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে উঠে এসেছিলেন  চিন্ময় লাহিড়ী। ১৯৮৪ সালের ১৭ই আগষ্ট তিনি কালের অমোঘ নিয়মে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অমৃতলোকে গমন করেন । আর  রেখে যান  তাঁর সুরের,  রাগের নিজস্ব সৌন্দর্যের আলোকবর্তিকা  যা সর্বকালের সঙ্গীতের পথের দিশা
ভবানীপুর সঙ্গীত সম্মীলনীতে সঙ্গীতরত শিল্পী




                                                                                                                              

 কৃতজ্ঞতা- শৌনক গুপ্ত, সিদ্ধার্থ দত্ত, সন্দীপ মুখোপাধ্যায় ,সাত্যকি সরকার
সূচনাপর্বের ঘটনা সূত্র -বেতার জগৎ
                                                       দ্রঃ এই নিবন্ধের কোনও অংশ কেউ ভবিষ্যতে  ব্যবহার করলে তা অনুমতি সাপেক্ষ

Comments

  1. উপযুক্ত মূল্যায়ন করছেন।

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ.. আপনার পরিচয়টা দিলে ভালো লাগতো

    ReplyDelete
  3. অপূর্ব.. অনেক অজানা তথ্য পেলাম..

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ.. চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো.. আপনাদের শুভেচ্ছায় তা সম্ভব হয়েছে..

      Delete
  4. অনেক সমৃদ্ধ হতে পারলাম ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে..

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মরমিয়া বাঁশি- অখিলবন্ধু ঘোষ (২০.১০.১৯২০-২০-০৩-১৯৮৮)

" বা ড়িটা আমার অনেক দিনের চেনা । প্রায় তিরিশ বছর । নোনা ধরা পুরোনো বাড়ি । তিরিশ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে । বদলায়নি বাড়িটার চেহারা । এই জীর্ণ প্রাসাদে প্রায়ই সুর ভেসে ওঠে । ঠিক তখন মনে হয় বাড়িটা যে ধ্বসে পড়েনি , তার কারণ মনে হয় সুরের গাঁথুনি । যিনি সুরসাধক তাঁর কাঁচা চুল পাকা হয়েছে , দাঁত অন্তর্হিত — কিন্তু সুর অনড় । গান ধরলেই বিবর্ণ দেওয়ালে রামধনুর রঙ । হলুদ পাতায় সবুজ শিরা ।"    ১৯৮৫ সালে    ‘ সুকন্যা ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন মানব গুপ্ত ছদ্মনামে  তাঁর এক ছাত্র।                                  সাধকের নাম অখিলবন্ধু ঘোষ । নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে যেন হৃদয়াকাশে   ভিড় করে আসে এমন সব গান , যে গান শুনতে চেয়ে ছে মন   বার বার   - ‘ তোমার ভুবনে ফুলের মে লা’ ,  ‘ কেন তুমি বদলে গেছ’ , ‘ এমনি দিনে মা যে আমার হারিয়ে গেছে ‘। যেন কোনো এক উদাসীন বাউল গেয়ে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে যা র সঞ্চরণ   এখনোও কান পাতলে শোনা যায় । তাঁর গানের সহজ সরল ...

প্রভু তোমারি রূপের মাধুরী 💮 গীতশ্রী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়

আ লিপুর , গড়িয়াহাট বা শ্যামবাজারের কোন সম্ভ্রান্ত বাড়িতে সমবেত হয়েছেন শিক্ষিত ভদ্র মানুষেরা।ঘরে পট , প্রতিকৃতি দেবতার আর দেবতুল্য মানুষদের। ধুপদানিতে ধুপ জ্বলছে , টানা ফরাস পড়েছে ঘর জুড়ে। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও এসেছে  অনেকে। উত্‍কণ্ঠা সবার , আসবেন তিনি। গাইবেন গান , পদাবলী কীর্তন। তিনি এলেন। পরনে সাদা সরু পাড় ধুতি , গায়ে সাদা চাদর , চোখে চশমা। সর্বাঙ্গে না কোনো প্রসাধন না কোনো অলঙ্কারের চিহ্ন। মাথা নীচু আর শান্ত পায়ে ঢুকলেন। তারপর টেনে নিলেন হারমোনিয়ামটা।  সঙ্গে গুরুভগ্নী , ছাত্রীরা। তারাও প্রস্তুত ছিলোনা মোটে । না , আজ কোনও পদাবলী কীর্তন নয়। আজ শুধু নামগান। যদিও আজ সোমবার , মৌন থাকার দিন। কিন্তু ঈশ্বরের নাম তো সবদিনই নেওয়া যায়! তাই বাধা নেই।                                                       মধুর উদাত্ত স্বর।ঋজু ভঙ্গিতে বসে রইলেন একই ভাবে !চোখের পাতা একবারও খুললেন না। শান্ত ভাবে গেয়ে চলেছেন 'হরে কৃষ্ণ, হ...