জন্ম ১৯২০ সালের ২০শে মার্চ বাংলাদেশের পাবনা জেলার তাঁতীবন্ধ গ্রামে
। পিতা শ্রীজীবচন্দ্র লাহিড়ী ও মাতা শ্রীমতী সরোজবাসিনী দেবী । মাত্র দু বছর বয়সে পিতার কর্মসূত্রে তাঁর সাথে চলে আসেন লখনউ । শ্রীজীবচন্দ্র মনে প্রাণে
চাইতেন ছেলে বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক। প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু কনুর যেন এসব ভালো
লাগেনা। সারাদিন ঘুরে বেড়ায় আর সকাল সন্ধ্যায় আখড়ায় ওস্তাদজীর কাছে মার প্যাঁচ শেখে গায়ে ধূলো মেখে। কুস্তিগীর হবে সে । মনে আর কোনো চিন্তা নেই। দিন যাচ্ছে মহা আনন্দে। এদিকে বাবা
ও রেগে যেন আগুন হচ্ছেন দিন দিন ।ছেলেটা মনে করছে
কি ! এভাবে কি জীবন কাটাবে সে ! সারাদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল
ডানপিঠে ছিলের সাথে, আর সর্দারি করে
বেড়াচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে হবে কিনা শেষ পর্যন্ত কুস্তিগীর ! বাবা ছেলেকে নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করেন । কিন্তু
শেষমেস বিফল হন তিনি । এসব মালমশলা , হিসেবপত্তর,
লোক লস্করের কথা ভাবলে কনুর মাথা হিম হয়ে
যায় । এর থেকে ঢের ভালো স্কুল পালিয়ে পরের বাগানে ফল চুরি করা , নয়তো বন্ধু রাজু আর
নিতুর সাথে গোমতীর ধারে ঘুরে বেড়ানো, বা অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে যেখানে মন চায়।
তা চলছিল বেশ। এইভাবে ঘুরে ঘুরে বেড়ানো সারাক্ষন। কিন্তু কোথা
থেকে এক উদাসীন হাওয়া দুলিয়ে দিয়ে গেল মনটা । কি হোল কে জানে ! মনের আক্ষেপে একদিন বসে থাকে তিন বন্ধু । বাঁধন ছাড়া মন হঠাৎ আটকে যায় কোন অজানার আহ্বানে।
হাতের ঢিলটা আনমনে ছুঁড়ে দিয়ে কানু বলে -
'আচ্ছা রাজু , আমরা তো কিছুই করলাম না রে জীবনে , বাড়িতে সবাই বকে, পাড়ার লোকে –কিন্তু আমরা তো পারি ,
বাধা দিল রাজু ।
' কনু তুই গাইয়ে হ, এমন মিস্টি গলা তোর !' অনেক ভেবেচিন্তে বলল নিতু।
কথাটা মন্দ লাগেনি কনুর। অবশেষে অনেক গবেষণার পর আর দুজনেরও ব্যবস্থা হল। তারা হবে কবি আর অভিনেতা। সেই দিনই বুড়ো শিবের মন্দির ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলো তিনজন , শিল্পী হওয়ার । কিশোর বয়সের সেই প্রতিজ্ঞা যেন এক অদৃশ্য পাকে বেঁধে ফেলল কনুকে। কিন্তু এভাবে তো হবেনা । গুরু চাই। তা গুরুর অভাব কি লখনউ শহরে ? তাই মরিস কলেজে চলে গেল কনু । আর্জি পেশ করল শ্রীকৃষ্ণ রতনজন্করের কাছে। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই বেঁকে বসলেন তিনি।
বললেন-' তুমি কুস্তি করো নাকি ! এমন ঘাড়ে গর্দানে চেহারায় গান হয়না।'
কনু জবাব দিল ‘ ঘাড় নিয়ে আপনি ভাববেন না , ও আমি ঠিক করে নেব, আমাকে আপনি শেখান গুরুজী।'
হাতের ঢিলটা আনমনে ছুঁড়ে দিয়ে কানু বলে -
'আচ্ছা রাজু , আমরা তো কিছুই করলাম না রে জীবনে , বাড়িতে সবাই বকে, পাড়ার লোকে –কিন্তু আমরা তো পারি ,
বাধা দিল রাজু ।
' কনু তুই গাইয়ে হ, এমন মিস্টি গলা তোর !' অনেক ভেবেচিন্তে বলল নিতু।
কথাটা মন্দ লাগেনি কনুর। অবশেষে অনেক গবেষণার পর আর দুজনেরও ব্যবস্থা হল। তারা হবে কবি আর অভিনেতা। সেই দিনই বুড়ো শিবের মন্দির ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলো তিনজন , শিল্পী হওয়ার । কিশোর বয়সের সেই প্রতিজ্ঞা যেন এক অদৃশ্য পাকে বেঁধে ফেলল কনুকে। কিন্তু এভাবে তো হবেনা । গুরু চাই। তা গুরুর অভাব কি লখনউ শহরে ? তাই মরিস কলেজে চলে গেল কনু । আর্জি পেশ করল শ্রীকৃষ্ণ রতনজন্করের কাছে। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই বেঁকে বসলেন তিনি।
বললেন-' তুমি কুস্তি করো নাকি ! এমন ঘাড়ে গর্দানে চেহারায় গান হয়না।'
কনু জবাব দিল ‘ ঘাড় নিয়ে আপনি ভাববেন না , ও আমি ঠিক করে নেব, আমাকে আপনি শেখান গুরুজী।'
'ঠিক হ্যায়। তব্ করকে দেখাও –সানিনি রেসাসা নি সা-----
ছোট্ট ছোট্ট টুকরো
। সাধতে লাগলো কনু। সাধতে সাধতে গলা ধরে গেল । পরীক্ষা দিতে এলো সেই ধরা গলা নিয়ে। দেখে শুনে প্রসন্ন হাসি
হেসে গুরুজী, বললেন -
'নাম কেয়া হ্যায় তুমারা
'নাম কেয়া হ্যায় তুমারা
চিন্ময় –চিন্ময় লাহিড়ী।
'ঠিক আছে শেখাব । ভর্তি হয়ে যাও কলেজে আর কুস্তি ছাড়ো।'
কুস্তি পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিল কনু । কুস্তি গিয়ে এল গান। দিবারাত্র । বিরাম নেই সাধনার। দীর্ঘ একমুখী সাধনার ফলে মিলল তার ফলও। খুব সহজেই নতুন নতুন অলঙ্কার বিস্তার, তান তুলে নিচ্ছে কণ্ঠে সে ! সঙ্গীত শিক্ষকরা তার গানে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন । এরই মধ্যে একদিন গান গাইবার সুযোগ এলো অল ইণ্ডিয়া রেডিও প্রোগ্রামে । রেডিওতে প্রথম গাইলেন গীত, গজল । তারপর সেই ১৯৩৬ সাল থেকে লখনউ বেতারের নিয়মিত শিল্পী হয়ে যান চিন্ময়।
'ঠিক আছে শেখাব । ভর্তি হয়ে যাও কলেজে আর কুস্তি ছাড়ো।'
কুস্তি পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিল কনু । কুস্তি গিয়ে এল গান। দিবারাত্র । বিরাম নেই সাধনার। দীর্ঘ একমুখী সাধনার ফলে মিলল তার ফলও। খুব সহজেই নতুন নতুন অলঙ্কার বিস্তার, তান তুলে নিচ্ছে কণ্ঠে সে ! সঙ্গীত শিক্ষকরা তার গানে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন । এরই মধ্যে একদিন গান গাইবার সুযোগ এলো অল ইণ্ডিয়া রেডিও প্রোগ্রামে । রেডিওতে প্রথম গাইলেন গীত, গজল । তারপর সেই ১৯৩৬ সাল থেকে লখনউ বেতারের নিয়মিত শিল্পী হয়ে যান চিন্ময়।
![]() |
বেতারে শিল্পী |
![]() |
দিলীপচন্দ্র বেদী |
![]() |
এইচ.এম. ভি. থেকে প্রকাশিত শিল্পীর প্রথম রেরর্ড |
কলকাতা তার পুরো অচেনা।জ্ঞানবাবুর ডিকসন্ লেনের বাড়ির খবরটা শুধু জানা ছিল। অনেক আকাঙ্খা ছিল ওখানে যাবার। তবে সত্যি সত্যি কলকাতা
তাঁকে বিমুখ
করেনি। লখনউ প্রবাসী ছেলেটিকে কলকাতার সঙ্গীত
সমাজ আপন করে নিয়েছিল। থাকার মতো একটা ভালো আশ্রয়ও পেয়ে গিয়েছিলেন রাধিকামোহন মিত্রর কাছে। সেই থেকে শুরু হোল কলকাতা বাস।
![]() |
রাধিকামোহন মৈত্র |
তারপর যত এক একটি বছর কেটে গিয়েছে তত সম্পর্ক আরোও দৃঢ় হয়েছে। নিয়মিত পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, যামিনী গাঙ্গুলীর মত
ব্যক্তিত্বের সাথে সঙ্গলাভের ফলে কলকাতার সঙ্গীতমহলে প্রতিষ্ঠা পেতে
তাঁর বেশি সময় লাগেনি।
এইচ. এম. ভি. থেকে তাঁর দ্বিতীয় রেকর্ড প্রকাশিত হয় জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কথা ও সুরে ১৯৪৮ সালে দমদম ষ্টুডিও তে .. তার মধ্যে একটি গান ছিলো "আসি বলে কেন এলোনা (N 27703) .. এরপর ১৯৫২ সালে অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে গান গেয়ে রাতারাতি তাঁর যশ , খ্যাতি সম্মান কলকাতা সহ
বাংলার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
![]() |
জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ |
![]() |
একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে শিল্পী |
চিন্ময় লাহিড়ীর সঙ্গীত জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট
ছিলো নতুন কিছু আহরন এবং তা থেকে সঙ্গীতের নিজস্ব নতুন ধারা গড়ে তোলা। প্রচলিত
প্রথার বাইরে বেরিয়ে এসে নতুনত্বের সন্ধান দিয়েছিলেন তিনি। যার ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছিল
নতুন নতুন রাগ। তার মধ্যে শ্যামকোষ , যোগমায়া, প্রভাতীতৌড়ী , রজনী কল্যাণ ,
গান্ধারিকা, নাগরঞ্জনী, মঙ্গলবতী, শুভ্রা র মতো রাগগুলি উল্লেখযোগ্য । নতুন একধরনের সরগম তিনি তৈরি করেছিলেন যা একেবারে তাঁর
নিজস্ব। এছাড়া 'মগন' ছদ্মনামে ভালো ভালো বন্দিশ রচনা করেন যেগুলি “ মগনগীত ও তান মঞ্জরী’ গ্রন্থে পাওয়া যায়।
![]() |
![]() |
'বৃন্দাবন লীলা' তে .. শিল্পীর প্লেব্যাক |
![]() |
পরভিন সুলতানা, মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায় |
আর একেবারে শুরুতে ছিলেন মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি এক স্মৃতিচারণায় লিখছেন ’ শ্রদ্ধেয় চিন্ময় কাকা আমার গুরু ছিলেন, সঙ্গীতের একটা পরীক্ষা দেবার সময় আমার বাবা শৈলেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে তিনি আমাকে তালিম দিতে শুরু করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সালের শেষ দিক পর্যন্ত তাঁর কাছে আমি তালিম নিই।ওঁর কাছে আমি ইমন ও মারোয়া রাগ দুটি শিখি।এছাড়া ধ্রুপদ ধামার, ওঁর লেখা ও সুর দেওয়া কিছু গীত শিখি। গলার আওয়াজ ছিল পাতলা আর মিস্টি। লয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে খুব সুন্দরভাবে গান গাইতেন। মানুষ হিসাবে খুব ভালো ছিলেন।'
![]() |
ট্রেনার চিন্ময় লাহিড়ী |
চলচ্চিত্রে
তাঁর ভুমিকা ছিল মূলত সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক শিল্পীরূপে। শোনা যায় রতন চ্যাটার্জীর 'মানদণ্ড' (১৯৫০) সিনেমায় তিনি প্রথম কণ্ঠদান করেন। কিন্তু তার কোনো প্রামাণ্য রেকর্ড তথ্য বা সিনেমার বুকলেটে উল্লেখ পাইনি.. বুকলেটে যে সমবেত কণ্ঠের গানটি (আপন কাজে অলস হলে চলবে না :- কথা - সুবোধ পুরকায়স্থ, সুর - অনিল বাগচী ) আছে তা হিন্দুস্থান রেকর্ড ( H 1470) থেকে প্রকাশিত হয়, যেখানে তাঁর নাম মুদ্রিত নেই.. বাকি গানগুলি মহিলা কণ্ঠে., যেগুলির বেশিরভাগ সন্ধ্যা মুখার্জি গেয়েছেন... এরপর দ্বৈরথ(১৯৫১) , শাপমোচন(১৯৫৫) , বৃন্দাবন লীলা (১৯৫৮), অন্তরাল (১৯৬৫),

![]() |
চিন্ময় লাহিড়ী সুরারোপিত ছায়াছবি |

উপযুক্ত মূল্যায়ন করছেন।
ReplyDeleteধন্যবাদ.. আপনার পরিচয়টা দিলে ভালো লাগতো
ReplyDeleteঅপূর্ব.. অনেক অজানা তথ্য পেলাম..
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ.. চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো.. আপনাদের শুভেচ্ছায় তা সম্ভব হয়েছে..
Deleteঅনেক সমৃদ্ধ হতে পারলাম ।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ আপনাকে..
Delete